মাঠ জুড়ে লোহার পাইপ! খেলার জায়গা এখন ডাম্পিং গ্রাউন্ড

তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়া: শহরের ঘন জনবসতির মাঝে এক টুকরো সবুজ মাঠ। সেখানেই গাদাগাদি করে রাখা রয়েছে অসংখ্য বড় বড় লোহার পাইপ। এই ছবি দেখে যদি মনে হয় কোন ঠিকাদারি সংস্থার ডাম্পিং গ্রাউণ্ড, তবে ভুল হবে৷ এটা কোনও ঠিকাদারি সংস্থার জমি নয়৷ বাঁকুড়া পুরসভার তত্ত্বাবধানে থাকা ছোট ছোট ছেলেমেয়ের খেলার মাঠ। বাঁকুড়া শহরের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠক পাড়া এলাকায় এই একটিই খেলার মাঠ রয়েছে৷ যেখানে ছোটদের পায়ে পায়ে গোল করা, বা ব্যাট হাতে চার ছয় মারার কথা৷ সেখানেই গত দু’বছর ধরে জবরদখল করে আছে একটি বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থা। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

রাজ্য সরকার যেখানে প্রতি বছর ধারাবাহিক ক্লাব গুলির ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অর্থ সাহায্য করছেন৷ তখন বাঁকুড়া শহরের বুকে একটি খেলার মাঠ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার তরফে জবর দখল করে রাখার ঘটনা অবাক করে বইকি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ চলছে। আর সেই কাজে ব্যবহৃত পাইপ বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থাটি মাঠে এনে জমা করে রেখেছেন। ফলে যে মাঠে খেলাধুলা করার কথা ছোটো ছোটো শিশুদের৷ তা আজ গত দু’বছর ধরে জবরদখল হয়ে পড়ে আছে। ভারি পাইপ ভরতি বিশালাকার লরির চাকার চাপে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। আর এই কাজে বর্তমান পুরসভার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন এলাকার বেশিরভাগ মানুষ।

স্থানীয়দের একাংশের সাফ কথা, প্রাক্তন পুরপ্রধান শম্পা দরিপা তাঁর আমলে এই খেলার মাঠের উন্নয়নে জোর দিয়েছিলেন। আর বর্তমান পুরবোর্ড খেলাধুলা বন্ধ করে বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থাকে তা ব্যবহার করতে দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা উর্মিলা মিশ্র বলেন, ‘এইভাবে খেলার মাঠে দিনের পর দিন পাইপ ফেলে রাখার ফলে জল জমছে। বাচ্চারা তো খেলার সুযোগ পাচ্ছেনা। এই মাঠেই খেলাধুলা করে আমাদের সন্তানরা বড় হয়েছে। আমরা পাড়ার বয়স্করা এখানেই বসে কতো অবসর সময় কাটিয়েছি। আর এখন সব জবর দখল হয়ে গেল।’

স্থানীয় বাসিন্দা পিকু দুবের মতে, ‘আমরা কেউ উন্নয়ন বিরোধী নই৷ কিন্তু পুরসভার নিজস্ব মাঠ বলে কি যা খুশি করতে পারেন? এখানে পাড়ার ক্লাব থেকে কয়েকটি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হত। প্রাক্তন পুরপ্রধান ও বর্তমান বিধায়ক এই মাঠে হাইমাস্ক আলোর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ওই আলোতে কি আমরা লোহার পাইপ দেখবো বলে৷ তাদের দাবি, দ্রুত এই পাইপ সরানো হোক। তারপর আমরাই আমাদের এই মাঠকে খেলাধুলার যোগ্য করে তুলবো।’

ডাঁই করা পাইপ রাখার পরেও যেটুকু ফাঁকা জায়গা আছে সেখানে আজও খেলাধুলা করে পাড়ার কচিকাঁচারা৷ বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ফুটবল খেলার ফাঁকে খুদে খেলোয়াড় বাসুদেব বাগদি বলে, ‘ফাঁকা মাঠ তো আর নেই। পুরো মাঠ জুড়ে লোহার পাইপ আর ঝোপঝাড়ে ভরতি। যত্রতত্র পেরেক পড়ে থাকার ফলে খেলার সঙ্গী ফুটবলটাও ফুটো হয়ে গিয়েছে’৷

সব মিলিয়ে পাঠক পাড়ার ঘরে ঘরে এখন একটাই আওয়াজ ‘ফিরিয়ে দাও আমাদের সেই সবুজ মাঠ।’ আর খেলার মাঠটিও যেন তার অব্যক্ত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ফিরে পেতে চাইছে তার হারানো সেই অতীত দিনগুলিকে৷ যেখানে ফুটবল বা ক্রিকেট ব্যাট বল নিয়ে সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়াতো পাড়ার খুদে মেসি, রোনাল্ডো, মারাদোনা থেকে সৌরভ, শচীন, মহেন্দ্র সিং ধোনিরা।

এই বিষয়ে বিধায়ক শম্পা দরিপা বলেন, ‘আমি নিজেও দেখেছি ওই মাঠে পাইপ নামানো আছে। উলটো দিকে বাইপাস আছে৷ পাইপগুলো ওখানেই নামালে ভালো হত৷ খেলার মাঠে পাইপ নামানো যুক্তিযুক্ত হয়নি দাবি করে তিনি৷ মাঠ শিশুদের খেলার জায়গা। এইভাবে ওই মাঠ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি পুরপ্রধান থাকাকালীন মাঠটা ঘিরে দিয়েছিলাম। এইভাবে মাঠ জবরদখল করার বিরোধিতা করে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও জানান।’

এই বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধি কথা বলেছিলেন পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের সঙ্গে। তিনি জানান, বাঁকুড়া পুরসভার চারটি ওয়ার্ডে জল সরবরাহের জন্য ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় একটি জল প্রকল্পের কাজ চলছে। একটা বড় প্রকল্প তৈরি করতে গেলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখার জায়গা দরকার এমনটাই যুক্তি দেখান তিনি৷ তার বক্তব্য কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষ হলেই মাঠ পরিষ্কার করে খেলার উপযোগী করে দেওয়া হবে৷

The post মাঠ জুড়ে লোহার পাইপ! খেলার জায়গা এখন ডাম্পিং গ্রাউন্ড appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.


Kolkata News

Comments

Popular posts from this blog

রুশ ইউক্রেনের টক্কর এখন অতীত! পাকিস্তানের মাটিতে পড়ল ভারতের সুপারসনিক মিসাইল

sangbad pratidin

all links of India Rag